কক্সবংলা ডটকম(২৪ এপ্রিল) :: চলমান তাপ প্রবাহের কারণে হিট অ্যালার্টের মেয়াদ আরও ৩ দিন বাড়ছে।
বৃহস্পতিবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়।
দেশব্যাপী বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ শুরুতে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ থাকলেও ক্রমে তা তীব্র থেকে অতি তীব্র হয়ে উঠেছে। বছরের উষ্ণতম মাস এপ্রিল এবার যেন অন্য যে কোনো বছরের চেয়ে অনেক বেশি উত্তাপ ছড়াচ্ছে। মাসের এখনও সপ্তাহখানেক বাকি। এরই মধ্যে কয়েক দফায় হিট অ্যালার্ট জারি হয়েছে দেশে। এমন পরিস্থিতিতে শিশুদের ওপর অসহনীয় গরমের নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে সারাদেশে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার।
এরই মধ্যে জলবায়ুর ক্রমবর্ধমান বিরূপ পরিবর্তনে শিশুদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শিশু জরুরি তহবিল (ইউনিসেফ)।
অতি গরমে শিশুদের হিটস্ট্রোক, পানিশূন্যতাজনিত ডায়রিয়ার মতো স্বাস্থ্যঝুঁঁকির বিষয়টিও তুলে ধরে প্রতিরোধ ও প্রাথমিক চিকিৎসাসহ ৩টি পরামর্শও দিয়েছে সংস্থাটি।
এর আগে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই জাতিসংঘের আবহাওয়া বিষয়ক শাখা জানিয়েছিল, ভয়ংকর গরমে শিশুরা বেশি বিপদাপন্ন। পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রায় ২৪ কোটির বেশি শিশু বিপদাপন্ন।
তারা পড়তে পারে তাপসংক্রান্ত অসুস্থতার কবলে; এতে তাদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল সংস্থাটি। এদিকে টানা এই তাপপ্রবাহকে অস্বাভাবিক বলছেন দেশের আবহাওয়াবিদরা। তারা বলছেন, গত এক দশক থেকেই এপ্রিল মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি থাকছে তাপমাত্রা। এপ্রিল মাসের গড় স্বাভাবিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ দশমিক ২।
তবে এবার এপ্রিলে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। অধিকাংশ জায়গায় তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রির উপরে থাকছে।
শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাড়তে থাকা গরমে বড়দের চেয়ে শিশুদের ঝুঁকিই বেশি। শিশুরা নিজেদের শরীরের তাপমাত্রা বড়দের মতো নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না।
তাপমাত্রা বাড়ার ফলে যে অসুস্থতা- সেগুলোতে তারাই বেশি ভোগে। গতকাল বুধবার ইউনিসেফের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে শিশুরা। তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে শিশুদের জন্য।
বিশেষ করে নবজাতক, সদ্যোজাত ও অল্পবয়সি শিশুদের জন্য। হিটস্ট্রোক ও পানি শূন্যতাজনিত ডায়রিয়ার মতো, উচ্চতাপমাত্রার প্রভাবে সৃষ্ট অসুস্থতায় শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সন্তানদের পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা ও নিরাপদ রাখার জন্য বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের জন্য অভিভাবকদের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট।
ইউনিসেফের ২০২১ সালের শিশুদের জন্য জলবায়ু ঝুঁকিসূচক (সিসিআরআই) অনুযায়ী, বাংলাদেশে শিশুরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
তাতে বলা হয়েছে, চলমান এই তাপপ্রবাহসহ জলবায়ু পরিবর্তনের আরো ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শিশুদের রক্ষা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার এখনই সময়। অস্বাভাবিকভাবে তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় আমাদের আগে শিশু ও সবচেয়ে অসহায় জনগোষ্ঠীকে নিরাপদে রাখার প্রতি নজর দিতে হবে।
ইউনিসেফের পক্ষ থেকে যেসব প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়;
সেগুলো হলো- শিশুরা যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের বসা ও খেলার জন্য ঠাণ্ডা জায়গার ব্যবস্থা করা; তপ্ত দুপুর ও বিকালের কয়েক ঘণ্টা তাদের বাড়ির বাইরে বেরোনো থেকে বিরত রাখা; শিশুদের হালকা ও বাতাস চলাচলের উপযোগী পোশাক পড়ানো; প্রচুর পানি পানের বিষয়টি নিশ্চিত করা।
প্রাথমিক চিকিৎসার জন্যও কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব দেয়ার কথা বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
এতে বলা হয়, যদি কোনো শিশু বা অন্তঃসত্ত্বার মধ্যে ‘হিটস্ট্রেস’ বা তাপমাত্রাজনিত সমস্যার উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে তাকে একটি ঠাণ্ডা বা ছায়া এবং পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের সুযোগ আছে, এমন জায়গায় নিয়ে যেতে হবে।
উপসর্গের মধ্যে আছে মাথা ঘোরা, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, বমি বমি ভাব, হালকা জ¦র, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, মাংসপেশিতে টান, ডায়াপার পরার জায়গাগুলোতে ফুসকুড়ি।
ঠাণ্ডা জায়গায় নিয়ে ভেজা তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছিয়ে বা গায়ে ঠাণ্ডা পানি দিতে হবে। তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি বা খাওয়ার স্যালাইন পান করতে হবে।
হিটস্ট্রেসের (তাপমাত্রাজনিত অসুস্থতার) উপসর্গ তীব্র হলে, যেমন- কোনো কিছুতে সাড়া না দিলে, অজ্ঞান হয়ে পড়লে, তীব্র জ¦র, হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলে, খিঁচুনি দেখা দিলে এবং অচেতন হয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিতে হবে।
প্রতিবেশীদের প্রতিও খেয়াল রাখার তাগিদ দিয়ে ইউনিসেফ বলছে, আপনার প্রতিবেশী, বিশেষ করে যারা একা থাকেন, তাদের খোঁজ নিন ও খেয়াল রাখুন।
এদিকে গরমে শিশুদের খাওয়ার দিকটিও গুরুত্বের সঙ্গে নেয়ার কথা বলছেন পুষ্টিবিদরা।
পুষ্টিবিদ তামান্না শারমিন বলেন, তীব্র গরমে শিশুদের সুস্থ রাখতে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি তাদের সারাদিনের খাবারের বিষয়টিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
খুব সহজে হজম হয়, প্রধান পুষ্টিগুণ বিশেষ করে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল- এই উপাদানগুলো আছে যেসব খাবারে সেই খাবারগুলোই শিশুকে দিতে হবে।
এছাড়া স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুরা এখন বাসাতেই থাকছে। তাই সারাদিনে সে পর্যাপ্ত পানি ঠিকমতো খাচ্ছে কি না, ঠিকমতো ইউরিন পাস করছে কি না সেই বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। এ ব্যাপারগুলো কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা শিশুকেও বুঝাতে হবে।
Posted ১১:৫৯ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta